বিজ্ঞান থেমে নেই, আর কখনও থেমে থাকে না। প্রতিদিন চলতে থাকে জানা-অজানা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা এবং অনুসন্ধান। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা গবেষণার ফলাফল জানা যায় কোন এক শুভক্ষণে। ২০১৩ সালে এমন শুভক্ষণ এসেছে অনেক। তারই মাঝে কয়েকটি নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।
১) সৌরজগৎ থেকে বের হয়ে গেলো ভয়েজার ১
খুব সাধারণ একটা তথ্য মনে হচ্ছে?
দ্বিতীয়বার ভাবুন। সৌরজগৎ কোন ছোট্ট এলাকা নয়। প্রতি সেকেন্ডে ১১ মাইল বেগে
চলেও সৌরজগৎ থেকে বের হয়ে যেতে ৩৬ বছর সময় লেগে যায় এই মহাকাশযানের। শুধু
তাই নয়, সৌরজগতের বাইরে এই প্রথম মানুষের তৈরি কোন কিছুর আগমন ঘটলো।
সেপ্টেম্বরে NASA নিশ্চিতভাবে জানায় এই তথ্য। মানবজাতির জন্য নিঃসন্দেহেই
এটি অনেক বড় একটি অর্জন।
২) বাসযোগ্য গ্রহ দিয়ে ভরে আছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
হ্যাঁ। মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত
পৃথিবী খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই। নভেম্বরে জানা
যায়, সূর্যের মত ২২ শতাংশ তারকার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে এমন সব গ্রহ যাতে
মানুষের বসবাস সম্ভব। আর আমাদের থেকে মাত্র ১২ আলোকবর্ষ দুরেই থাকতে পারে
এমন একটি গ্রহ। কেপলার থেকে যতগুলো গ্রহের তথ্য পাওয়া গেছে তার মাঝে যে কোন
একটিই হয়তো হবে দ্বিতীয় পৃথিবী।
৩) মস্তিষ্কের মাঝে যোগাযোগ সম্ভব:
সহজ ভাষায় বলতে গেলে টেলিপ্যাথি। ইঁদুরের
মাঝে এই গবেষণা সফল হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে দেখা যায়, এক মস্তিষ্ক থেকে আরেক
মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানো যায় হাজার হাজার মাইল দুরত্ব থাকার পরেও। পরবর্তীতে
মানুষ এবং ইঁদুরের মস্তিষ্ক এবং পরিশেষে দুইজন মানুষের মস্তিষ্কের মাঝে এই
যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
৪) HIV নিয়ে জন্ম নেওয়া এক শিশুকে রোগমুক্ত করলেন ডাক্তাররা:
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম রহস্য হলো HIV
AIDS এর প্রতিকার। এখনো পর্যন্ত এই রোগের একেবারে নিখুঁত কোনও প্রতিকার
আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সেই পথে এক পা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে
বটে। গত বছরের মার্চে একটি শিশুর HIV ইনফেকশন দূর করা সম্ভব হয়েছে।
জন্মগতভাবে HIV আক্রান্ত এই শিশুর আরোগ্যলাভ নিঃসন্দেহে চিকিৎসাবিজ্ঞানের
একটি মাইলফলক।
৫) মানুষের বিবর্তনের অভিনব তথ্য দেয় প্রাচীন খুলি
জর্জিয়ার দমানিসি অঞ্চল থেকে পাওয়া গেছে
খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা এবং ১.৮ মিলিয়ন বছরের পুরনো মাথার খুলি। মানুষের
বিভিন্ন উপপ্রজাতি সম্পর্কে আগে যা ধারণা করা হতো, সে ধারণা সম্পূর্ণরূপেই
পাল্টে দেয় এই খুলি। আগে মানুষের যে কয়টি উপপ্রজাতি ছিলো বলে ধারণা করা
হতো, সে সংখ্যা কমিয়ে আনে এই খুলি।
৬) কিউরিওসিটি জানায় মঙ্গলে একসময় ছিলো প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ
লাল গ্রহে প্রাণের চিহ্ন খুঁজছিলেন
গবেষকেরা অনেক দিন থেকেই। এবার প্রাণ খুঁজে না পেলেও তারা এ ব্যাপারে
নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে সেখানে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ এক সময়ে ছিলো।
কিউরিওসিটি মঙ্গলের মাটিতে গর্ত করে দেখতে পায়, একসময় এর মাটি ছিলো ভেজা।
সালফার, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, কার্বন ইত্যাদি উপাদান
পাওয়া গেছে এর মাটিতে যা প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে জরুরী।
৭) পাওয়া যায় অন্য গ্যালাক্সি থেকে আসা নিউট্রিনো
অ্যান্টার্কটিকার এক হিমবাহে ১.৫ মাইল গভীর
ফুটো করে পাওয়া যায় এমন কিছু নিউট্রিনো যা আমাদের সৌরজগৎ তো নয়ই, বরং
আমাদের গ্যালাক্সির ভেতর থেকেও আসেনি। এগুলো সম্ভবত অনেক লম্বা পথ পাড়ি
দিয়ে, অন্য কোনও গ্যালাক্সি থেকে পৃথিবীতে এসে পড়েছে।
৮) তৈরি করা হলো ক্ষুদ্র-অঙ্গ
ভাবুন তো এমন এক সময়ের কথা যখন কোনও রোগে
বা দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলেও দুঃখের তেমন কিছু থাকবে না। নিজের প্রয়োজনীয়
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করে নেওয়া যাবে যে কোনও সময়ে। এখনি সেটা সম্ভব নয়। তবে
গবেষকেরা সক্ষম হয়েছেন ল্যাবরেটরিতে ক্ষুদ্রাকৃতির মানব অঙ্গ তৈরিতে। এই
গবেষণার হাত ধরেই এক সময়ে প্রমাণ আকৃতির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করা যাবে।
৯) ভারত সাগরের নিচে এক প্রাচীন মহাদেশ
যুগ যুগ ধরে নিখোঁজ ছিলো মরিশিয়া। এই ছোট্ট
মহাদেশটি এক সময়ে মাদাগাস্কার এবং ভারতের মধ্যবর্তী স্থান দখল করে ছিলো।
পরে এটি ভেঙ্গে উধাও হয়ে যায়। এতদিন পরে বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের
ফলে এটাকে আবারো খুঁজে পাওয়া গেছে।
১০) বাস্তব হলো মানব ক্লোনিং
১৭ বছর ধরে চলতে থাকা গবেষণার ফলাফল পাওয়া
গেলো এতো দিনে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পরম আরাধ্য এই মানব ক্লোনিং অবশেষে
সম্ভব হয় এই বছরের মে মাসে। ক্লোন করা মানব ভ্রুন থেকে স্টেম সেল আহরন করতে
সক্ষম হন তারা। পারকিনসন’স ডিজিজ এবং ডায়াবেটিসের মত রোগের নতুন প্রতিকার
বের করার ক্ষেত্রে এই উদ্ভাবন কাজে লাগতে পারে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
Write commentsThanks for your comment!!